বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছচ্ছে পশ্চিমবাংলার বিজেপিতে। স্বয়ং রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ এবং হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ি আটকে গেল ক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মী–সমর্থকদের বিক্ষোভের সামনে পড়ে। ধনেখালির মদনমোহনতলায় জনসভা সেরে কলকাতায় ফিরে আসার পথে এমনই অনভিপ্রেত ঘটনার মুখোমুখি হন দলের দুই হেভিওয়েট সাংসদ। ঘটনাটি নিয়ে বিজেপির অভ্যন্তরেই শুরু হয়ে গিয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কিন্তু বিক্ষুব্ধ কর্মীদের কী করে শান্ত করা যাবে, সেই পথ এখনও খুঁজে পাননি দলের রাজ্য নেতারা।
২০২১ সালে বিধানসভা ভোট। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, তৃণমূলকে সরিয়ে দিয়ে পশ্চিমবাংলার ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। তাঁর এই বক্তব্যে বিশ্বাস করে রাজ্যের বিজেপি নেতারা যে আশায় বুক বাঁধছেন, সে কথা বলাই বাহুল্য। ভাবী মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দলের ভেতরে অনেকের নামই উঠে আসছে। যদিও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে কাউকেই সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়নি এখনও। তবু নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার ভেবে দলের অভ্যন্তরে অনেকেই ঘুঁটি সাজাচ্ছেন বলে ইতি–উতি শোনা যাচ্ছে। অনেকের কথায় আবার দম্ভও ফুটে উঠছে। আবার, নানা ইস্যুতে দলের মধ্যেই যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ধীরে ধীরে মারাত্মক আকার নিচ্ছে, সে ব্যাপারে কারও হুঁশ নেই। যার প্রমাণ হাতে–নাতে পেয়ে গেলেন বিজেপির দুই সাংসদ। একজন দিলীপ ঘোষ, অন্যজন লকেট চট্টোপাধ্যায়। দিলীপ ঘোষ তো আবার দলের রাজ্য সভাপতিও।
ধনেখালির মদনমোহনতলায় জনসভা সেরে কলকাতায় ফেরার পথে মহেশ্বরপুরে তাঁদের গাড়ি ঘিরে ধরেন প্রায় শ’পাঁচেক মানুষ। আচমকা এমন বিক্ষোভে দুই সাংসদ কিছুটা হলেও হতচকিত হয়ে পড়েন। তাঁদের ধারণা হয়, সম্ভবত তৃণমূলের কর্মী–সমর্থকরা তাঁদের বিপাকে ফেলতে চাইছেন। কিন্তু পরেই ভুল ভাঙে তাঁদের। দুই সাংসদ জানতে পারেন, যাঁরা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাঁরা সকলেই বিজেপির কর্মী–সমর্থক। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা তাঁদের জানান, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে এসে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়ে যাচ্ছেন। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা উল্লেখ করেন ধনেখালি এবং সমসপুরোর কথা। ওই দুই জায়গায় সম্প্রতি মণ্ডল সভাপতি নিযুক্ত হয়েছেন তৃণমূল থেকে আসা অজয় কোলে। তৃণমূলের থাকার সময় এই নেতা নাকি অনেক বিজেপি কর্মী–সমর্থকের ওপর অত্যাচার করেছেন। অন্যদিকে, যাঁরা বিজেপি করার জন্য বারবার আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁরা কোনও পদ পাচ্ছেন না।
তাঁদের অভিযোগ মন দিয়ে শোনেন দিলীপ ঘোষ এবং লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁরা তাঁদের আশ্বাস দেন, বিষয়টি নিয়ে দলে আলোচনা হবে। বিজেপির প্রকৃত কর্মী–সমর্থকরা যথাযোগ্য মর্যাদাই পাবেন। তার পরই বিক্ষোভ তুলে নেন বিজেপি কর্মীরা। তবে এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্য কথা শোনা গেল হুগলি জেলা সাংগঠনিক সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের গলায়। তিনি জানান, তৃণমূলের কর্মী–সমর্থকরাই এমন ঘটনার পেছনে রয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জেলা বিজেপির কোনও যোগ নেই। অন্যদিকে, ধনেখালির তৃণমূল বিধায়ক অসীমা পাত্র বলেছেন, ‘যেখানেই বিজেপি বিরোধী কোনও ঘটনা ঘটছে, সেখানেই তৃণমূলকে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’ পাশাপাশি বিজেপির নবনিযুক্ত অজয় কোলের দাবি, তিনি বহুদিন ধরেই বিজেপি কর্মী।